GIF

লাজুক আলো দিয়ে আমার সকল
ক্লান্তি ক্ষত ধুয়ে- মুছে দিয়েছে।
আমরা ছুটছি রাজধানি থেকে দুরে
বহু দুরে যেখানে বসন্তের গন্ধে ভরা
যৌবনের উন্মাদনায় নদীটা ছুটে চলেছে
সাগরের সাথে আলিঙ্গনের নেশায়।
আমি আমার সাথীরাও চলছি সেই দিকে
দক্ষিণে, দেশের হিসেবে সেই অঞ্চলের নাম
দক্ষিণবঙ্গ। সাগরের নোনা জল
সেখানে জোয়ারের খেলা খেলে,

আবার ভাটিতে লুকায় লুকোচুরি ছলে।
ওই দিকের মানুষেরা নাকি
ডাঙ্গায় বাঘ আর নদীতে
হাঙ্গর কুমিরের সাথে লড়াই করে,
সেই সংগ্রামী জীবনের প্রতীক দক্ষিণবঙ্গের
মানুষেরা আমায় ডাক দিয়েছে। ওরা
আমার অনেক ভালবাসার বাঁধনে বাঁধা,
ওরা আমায় কাঁদায় হাসায় আবার
বুকে তুলে নেয় নদীটার মতো
ভাসায় ডুবায় আবার ভালবাসায়
দু'কুল ছাপিয়ে সব উজার করে দেয়।
সব মিলিয়ে সেখানে আছে আমার
অনেক প্রেম, আমি খুঁজে পাই
সাধারণ মানুষের অনেক বেশী
ভালবাসার গন্ধ; ওরা আমাকে
কাছে টানে সাগরের পানে নদীর মতো।
বহুবার গেছি ওই দক্ষিনে
একদা যেখানে নদীরাই ছিলো
চলার মাধ্যম একবার দু’বার তো
ভালই লাগে সেই আদিম ব্যবস্থা।

আমি যুগের বিপ­বের স্বপ্ন দেখেছি
আমার হাতে তখন শাসনদন্ড ছিলো
সেই দন্ডটিকে আমি উন্নয়ন
সমৃদ্ধি-সংস্কারের জিয়নকাঠিতে
রূপান্ত—রিত করেছি যার ছোঁয়ায়
ঘুমন্ত— বাংলা আরমোড়া দিয়ে
জেগে উঠেছিলো কোনো স্বপ্ন নয়
বাস্তবের আলো ছড়ানো ভোরের
রক্তিম সূর্য বিংশ শতাব্দীর
সায়ান্ন সময়ে নতুন বিশ্বের মিছিলে
সামিল হবার দুরন্ত— প্রত্যয়ে।
সুষম উন্নয়নের ধারায় এলো একদার
অবহেলিত পিছিয়ে থাকা দক্ষিণবঙ্গ।

নিজের সৃষ্টিকে দেখার অপার আনন্দ
উপভোগের বাসনা আমাকে বারে বারে
নিয়ে গেছে এ প্রান্ত— থেকে ও প্রান্তে,
অন্ত হীন উচ্ছাস আমাকে জড়িয়ে ধরেছে
নদীর লজ্জা ভরা বুকটাকে কুয়াশার
কম্বলে ঢেকে রাখার মতো।
আমি হেঁটেছি পিচ ঢালা সড়কে পাড় হয়েছি
ব্রীজ-কালভার্ট একদা যেখানে
সারি সারি বাঁধা থাকতো খেয়া নৌকা,
যে গাঁয়ে এক সময়ে সন্ধ্যার আঁধার ঢাকতে
মিটি-মিটি বাতিটা বেঁচে থাকতো
বাতাসের সাথে লড়াই করে
সেখানে সুইজ টিপে আলোর জোয়ার
বইয়ে দিলাম অন্ধকার মুছে
সেই সৃষ্টি সুখের উল­াস আমাকে
ভাসিয়ে নিয়ে যায় অনেক বার
আরো বেশী বার সংগ্রামী সাহসী
মানুষের কাছে যারা এখন
সাবলম্বী। আমাকে ভোলেনি
সেই কৃতজ্ঞ দক্ষিণবঙ্গের মাটি ও মানুষ।
ওই দক্ষিণের পলিপড়া মাটি কথা বলে ফসলের
ফুল থেকে, গান করে কৃষকের কণ্ঠে।

আমি অনেক দিন শুনতে পাইনি
সেই কথা সেই গান,
আমার হাত বাঁধা ছিলো
আমার মুখ ছিলো কিন্তু
সেই মুখ মুক করে রাখা ছিলো, আমার
কান ছিলো কিন্তু মাটি আর মানুষের
গান শুনতে কালা করে রাখা ছিলো।
ছ’ছটা বছরের প্রতিটা মূহুর্তকে
মৃত্যুর চেয়ে কঠিন অনুভব করে
বাঁচতে হলো আমাকে।
পুত্র-কণ্যা-স্ত্রী থেকে বিচ্ছিন্ন
মাটির ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত আর
মানুষের ভালবাসার পরশ থেকে
দুরে রাখা হলো আমাকে।

তার প্রতিবাদে মানুষেরা জাগলো
সোচ্চার হলো তাদের কণ্ঠ
মুক্তির রায় এলো ব্যালটের সিলে।
অবাক বিশ্ব তাকিয়ে দেখলো
এ দেশের জনতা ইতিহাস গড়েছে
বিরল ইতিহাস মানুষের ভালবাসার।
আমি মুক্ত আলোতে বেরিয়ে এলাম,
আবার শুরু করলাম যাত্রা,
চারনের মতো পথ চলা,
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে চাইলাম
আমার সাজানো বাগানের
ফুলগুলো ঠিক মতো ফুঁটে আছে তো!
নাকি ঝরে গেছে অবহেলায় অনাদরে
কিংবা তপ্ত রোদে শুকিয়েছে অথবা
ঝড়ের ঝাপটায় খসে গেছে বৃতি থেকে!
ডালের ফাঁকে বাসা বাঁধা পাখিটা
সকাল ও সাঁঝে সেই আগের মতো
গান গায় তো! নাকি কোনো
নিষ্ঠুর ব্যাধের বিষাক্ত শরাঘাতে
বুকটা তার বিদির্ন হয়ে গেছে!

দক্ষিনের নদীর ঢেউ আমাকে
হাত ছানি দেয় বলে, দেখে যাও
কেমন আছি আমি । সারা না দিয়ে
পারি না, ছুটে যাই সেখানে
জনতার সাগরে জাগে উর্মী
আমি অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে দেখি
মানুষের ভালবাসার ঢেউ।
যে ঢেউ আমাকে দুলিয়ে
ভুলিয়ে দেয় আমার
পড়ন্ত বিকেলের সকল ক্লান্তি—,
ভুলে যাই পরিবার পরিজনের কথা,
উপোভোগ করি সন্ড়ানের
আদর মাখা  ঠোঁটের ছোঁয়া
লতার মতো জড়িয়ে রাখা তার
হাতের বাঁধন ব্যক্তি জীবন নির্বাসন দিয়ে।
আমি চৌদ্দ কোটি মানুষকে নিয়ে
গড়েছি আমার নতুন সংসার,
বেঁধেছি ঘর গোটা দেশ জুড়ে।
সেই ঘর নতুন করে সাজাতে চাই
চৌদ্দ কোটির পরিবারকে
বাঁচাতে চাই, করেছি অঙ্গীকার

(১১ ফেব্র“য়ারি ২০০৬- এর দক্ষিণবঙ্গ সফর শেষে)

0 comments:

Post a Comment

 
Top