GIF

একটি অভিজ্ঞতার আলোকে
--- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ


নতুন অভিজ্ঞতার স্মৃতিঘেরা একদিন যেখানে
অনেক কথা বলার মাঝেও জানা হয়ে গেছে
আরো অনেক কিছু, আপন জিজ্ঞাসা-
নিজেই এসব এতোদিন জানতে চাইনি কেনো ?
আমার তো এক অবারিত জগৎ আছে
সকলের বিচরণে সেখানে নেই কোনো
বাঁধা- নেই কোনো অস্পষ্টতা- নেই বিভ্রান্তির
কোনো অবকাশ, স্বচ্ছতার এতোটুকু ফাঁক
রাখিনি কোথাও- তবুও
জবাব আমার থমকে গেছে কখনো
কখনো উত্তর খুঁজতে হোঁচট খেয়েছি
একদিন নারী সাংবাদিকদের
মুখোমুখি হয়ে। হয়তো নতুন অভিজ্ঞতা
এভাবে আসে জড়তার পরাগ মাখা আবছা
আলোর মতো- লাজরাঙা নববধুর বেশে;
তারপর সপ্রতিভ হলে আলোর ছটায়
উদ্ভাসিত হয় মুখ- মন- অবয়ব।

সাংবাদিকতায়ও নারী পেছনে পড়ে নেই
জেনেছি ওদের মুখোমুখি হয়ে- আমি
অবশ্য পেশায় নারী পুর“ষের ভাগ মানিনি
কখনো- এখনো নয়।
তবুও বা¯—বতা সব কিছুতে
নারীকে পেছনে টানে পরিবেশ পরিস্থিতির
শিকার হয়, অনেক বাঁধার প্রাচীর
সামনে এসে দাঁড়ায়। প্রতিক‚ল পরিবেশ
পেরিয়ে বেড়িয়ে আসা নারীকে আমি
বীরঙ্গনা বলি। তারা সরলা হতে পারে
অবলা নয় কখনো- মেধায়
মননে যোগ্যতায় দক্ষতায় কর্মে কিংবা পেশায়।

সমাজের দর্পন যাদের জানি- তাদের
প্রশ্নমালা আমার কণ্ঠ জড়িয়ে রাখে
প্রতিনিয়ত প্রতিক্ষণ- অনেকটা কর্মজীবনের
নিত্যসঙ্গীর মতো। ওরা আমার
চলার পথের প্রেরণা- একদিন ওদের
পেলাম এক ব্যতিক্রম সমাবেশে।
ফুলদানিতে নানা ফুলের
সমারোহের মতো নয়- শুধু
একগুচ্ছ রজনীগন্ধার মতো- নারী সাংবাদিক
ওদের প্রশ্ন আমাকে অভিভূত করলো-
দেশ কাল পাত্র সমাজ সংসার
সংষ্কার, অর্থনীতি, রাজনীতি, সং®কৃতি
কোনো কিছুই আর অস্পষ্ট নেই নারীর কাছে
তারা জানে- জানাতে পারে- শেখাতে
বোঝাতে পারে- জেনে নেয়ার মতো
যোগ্যতাও রাখে। আর কখনো আমাদের
রোকেয়ার স্বপ্ন- স্বপ্ন হয়ে রবে না।
বা¯—বতা এখন শুধু দ্বারপ্রান্তে নয়
একেবারে কাছে আয়ত্তের মাঝে।
নারী আর তাদের অধিকার সম্পর্কে
এতোটুকু অচেতন নেই।

এক নারী সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিলো
নারী সমাজ নাকি আমাকে
বেশী ভালোবাসে- তার অন্তর্নিহিত কারণ
ওর জানার আগ্রহ। ভালোবাসা
সেতো অনুভব অনুভূতি হৃদয়ের
উপলব্ধির এক শ্বাশত বিষয়।
ভালোবাসা দেয়া আর পাওয়ার
মাঝে ব্যাখ্যার কোনো অবকাশ আছে বলে
ভাবিনি কখনো- তথাপিও
মুহুর্তে মনের কোনে জাগ্রত হলো
এক অপূর্ব অনুভবের কথা, বিশ্বাসের বাণী-
তারই প্রকাশ ঘটলো অপরিকল্পিত উত্তরে।
নারী- সেতো স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ্য সৃষ্টির মধ্যেই
আরো মহিমামন্ডিত প্রকৃতির চিত্র,
কন্যা জায়া জননী এই তিন রূপে
আবির্ভুত হে ভালোবাসা আর মমতার প্রতীক।
এই প্রকৃতি আমাকে দেখেছে
আর্ত মানবতার মাঝে সেবায় ব্রতী হতে
দেখেছে সমস্যা সংকুল একটি দেশকে
নতুনভাবে সাজানোর কারিগর রূপে
দেখেছে নির্যাতনে পিষ্ট হতে-
জাগ্রত হয়েছে তাদের মাতৃহৃদয়
একটি যন্ত্রনাকাতর সন্তানের প্রতি।



বিশ্বের যতো বড় বীর হোকনা কেনো
হোকনা যতো পরাক্রমশালী- মায়ের কাছে
সেতো চিরদিনের শিশু। তার কাছে
সন্তানের আর্তি অনন্ত কালের জন্য।
মল­যুদ্ধে বীর র“¯—মের নীতিহীন
আঘাতে আহত সোহরাবের কাতর চিৎকার
ছিলো “মা তুমি কোথায়, অন্যায়ের
কাছে আমি হেরে গেলাম !”
তখনো মাতৃহৃদয় কেঁপে উঠেছিলো যেনো
প্রকৃতির বিধানে- নাড়ির সংযোগের টানে।
আমিও তেমন এক অন্যায়ের সমরে
প্রতিহিংসার শরাঘাতে বিদ্ধ হয়ে
যন্ত্রনায় কাতর ছিলাম ছ-ছটা বছর
নির্যাতনের রোলারে পিষ্ট হয়েছে
আমার শরীর মন চিন্তা চেতনা
সবকিছু- ভেঙ্গে চুরমার হয়েছে কতো
স্বপ্ন সাধ, শৃক্সখলিত কবিতার ভাষা
যন্ত্রনায় জর্জরিত হয়ে চীৎকার করে
বলেছে- মা আমি আক্রাš—, অন্যায় যুদ্ধে
হেরে যাচ্ছি। যন্ত্রনায় কাতর অস্পষ্ট সুরে
বলেছি- মা তুমি আজ কোথায়
কতো দূরে- আমি যে
বন্দী যন্ত্রনায় কাতর হয়ে ডাকছি
তুমি কি শুনতে পাওনা।
সন্তানের কান্না মায়ের কানে কি
না পৌঁছে পারে ! চির নিদ্রায় শায়িত
আমার মায়ের বুকের কাতর স্পন্দন
জাগ্রত হয়েছিলো এদেশের লক্ষ কোটি
মায়ের মমতা জড়ানো অন্তরে
সেই অন্তর একটি সন্তানকে ভালোবেসেছে
মমতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছে
কেনো করেছে- তা শুধু মাতৃহৃদয় বলতে পারে।


(১ জুন, ২০০৪: নারী সাংবাদিকদের মুখোমুখি
অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা থেকে

0 comments:

Post a Comment

 
Top